সম্ভবত বাঙালির প্রাচীনতম রেসিপির একটি। সময়রেখা ধরে আর একটু পিছিয়ে গেলে প্রাকৃতপৈঙ্গল থেকে জানা যায়, ফেনা ওঠা ভাত, যা খাওয়া হতো কলাপাতায়, তাতে থাকত গাওয়া ঘি,পাটশাক, ময়না বা মৌরলা মাছ আর সঙ্গে দুধ। মোটামুটি এই হলো সাধারণ মানুষের খাবারের প্রাচীনতম নমুনা।
চতুর্দশ শতাব্দীর ‘প্রাকৃত পৈঙ্গল’ গ্রন্থে-
“ওগগরা ভত্তা রম্ভঅ পত্তা গাইক ঘিত্তা দুগ্ধ সজুক্তা
মৌইলি মচ্ছা নলিতা গচ্ছা দিজ্জই কান্তা খা(ই) পুনবন্তা।”
অর্থাৎ, যে রমণী কলাপাতায় গরম ভাত,ঘি,মৌরলা মাছ এবং এবং নলিতা অর্থাৎ পাট শাক পরিবেশন করে স্বামীকে খাওয়ায়, সেই স্বামী ভাগ্যবান।
উপকরণ :
মৌরলা মাছ :২৫০ গ্রাম,সর্ষের তেল: ৫/৬ টেবিল চামচ,আলু:বড় ১ টা সরু করে কাটা,পেঁয়াজ: ১ টা বড় মাপের কাটা,সর্ষে বাটা: ৩ চা চামচ,লঙ্কা,হলুদ গুঁড়ো,কালো জিরে :১ চা চামচ,কাঁচা লঙ্কা :৪/৫ টা চিরে,ধনে পাতা: কুচোনো,নুন: স্বাদ অনুযায়ী।
প্রণালী:
প্রথমে ফ্রাই প্যানে সর্ষের তেল গরম হলে তাতে মাছ আলু পেঁয়াজ দিয়ে নাড়তে হবে।একটু পরে লঙ্কা, কালোজিরে ছড়িয়ে একটু নেড়ে সর্ষে বাটা দিতে হবে।এর পর আবার চার চামচ সর্ষের তেল দিতে হবে।
এরপর বাকি সব উপকরণ মিশিয়ে নেড়ে স্বাদ অনুযায়ী নুন দিয়ে খুব অল্প জল দিয়ে নেড়ে ১০/১২ মিনিট সিমে ঢাকা দিয়ে রান্না করতে হবে।
আগেকার দিনে একান্নবর্তী পরিবারে (একান্নবর্তী অর্থাৎ এক অন্নে পালিত পরিবার) মা ঠাকুমারা এই দারুণ ডেলিসাস রেসিপি বাটিতে করতেন বলে এর নাম বাটি চচ্চড়ি।
পড়ুন: জমিদারবাড়ির গলদা চিংড়ির মালাইকারি
রবীন্দ্রনাথ তার অনেক লেখাতেই মাছের নানা প্রসঙ্গ এনেছেন। তাঁর ‘জীবন স্মৃতি’ গ্রন্থে তিনি জীবনের নানা ঘটনার উল্লেখ করেছেন আর সেই সাথে উঠে এসেছে চিংড়ি মাছের চচ্চড়ি, মৌরলা মাছের ঝোল, ইলিশ মাছ, কাঁটা চচ্চড়ি, মাছের ঝোল, মাছের কাঁটা দিয়ে ঘন্ট এরকম আরও নানা পদের কথাও।
ফ্রাই প্যান ছাড়াও বাটি চচ্চড়ির মতো একটা মাইক্রোওয়েভ বৌলে সব উপকরণ দিয়ে ১০/১৫ মিনিটে এই রান্না করা যায় তাতে স্বাদের খুব হেরফের হয়না।
রেসিপি : অপরূপা মিত্র
তথ্যসূত্র :বাঙালির রন্ধনশিল্প:রাধা চক্রবর্তী,সাময়িক পত্রে বাঙলার সমাজচিত্র:বিনয় ঘোষ
মৌরলা মাছের বাটি চচ্চড়ি ভিডিওঃ
শেয়ার করুন :