শীতের হাওয়া যতই মনভোলানো হোক, ত্বকের জন্য কিন্তু এ সময়টা বেশ কঠিন। বাতাসের শুষ্কতা, ঠান্ডা জল, রোদে কম আর্দ্রতা এই সব মিলিয়ে ত্বক তার স্বাভাবিক কোমলতা ও আর্দ্রতা হারাতে থাকে। ফলে দেখা দেয় খসখসে ভাব, চুলকানি, এমনকি আগাম বয়সের ছাপও।স্কিন সাধারণত চার রকমের হয় -ড্ৰাই,ন্যাচারাল,অয়েলি এবং মিক্সড।আবার কেবল মুখের স্কিনেই কত রকমফের।চোখের চারধারে একরকম,ঠোঁটের আর একরকম।তাই শীতের আগে থেকেই দরকার বিশেষ যত্ন ও রুটিনে কিছু ছোট বদল। এই সংখ্যায় ভারতের বিখ্যাত স্কিন কেয়ার এক্সপার্টরা জানিয়েছেন কীভাবে প্রতিদিনের যত্নে যুক্ত করবেন সঠিক ময়েশ্চারাইজার, পুষ্টিকর তেল, পর্যাপ্ত জল ও সুষম আহার,যাতে ঠান্ডা হাওয়ার ছোঁয়াতেও ত্বক থাকে সতেজ, উজ্জ্বল আর দীপ্তিময়।
ডার্মাটোলজিস্ট ডঃ শচীন ভার্মা,কসমেটোলজিস্ট ডঃ শ্রাবনী ঘোষ জোহা,স্কিন সার্জন ডঃ কৌশিক লাহিড়ী,হোমিওপ্যাথ ডঃ পিয়ালী সাহা,আয়ুর্বেদ বিশেষজ্ঞ ডঃ লোপামুদ্রা ভট্টাচার্য্য,বিউটি এক্সপার্ট শর্মিলা সিং ফ্লোরা,ডায়েটিশিয়ান ববিতা হাজারিকার এক্সপার্ট টিপস-
স্ক্যাল্প
স্ক্যাল্প রোগমুক্ত থাকলেই একঢাল স্বাস্থ্যোজ্জ্বল চুল।মাঝেমধ্যে তেল মাসাজ করুন।পছন্দসই তেল ব্যবহার করুন,তবে বেশিক্ষণ তেল মেখে থাকবেন না।
দিনে অন্তত দুবার মোটা দাঁতের চিরুনি দিয়ে আস্তে আস্তে চুল আঁচড়ান।
এক্সট্রা ভার্জিন অয়েল স্কিনের জন্য উপকারী ,এমনকি স্ক্যাল্পের জন্যও।
পাতিলেবুর রস চায়ের লিকারের সঙ্গে মিশিয়ে নিয়ে শ্যাম্পু করার পর এই জলে চুল ধুলে কন্ডিশনারের উপকার পাবেন।
তুলসী,জবা,আমলকি সমান পরিমানে মিশিয়ে তিল তেলে ফুটিয়ে রাখুন।ডাবের জলের সঙ্গে এই
তেল অল্প মিশিয়ে চুলের গোড়ায় লাগালে খুশকি আর চুলপড়া থেকে মুক্তি।
ব্রাহ্মী,আমলকি ,ভৃঙ্গরাজ নিয়ম করে মাখলে চুলের পুষ্টি আর সৌন্দর্য বাড়বে।
মুখ
ধুলো ময়লা ও মেক আপের ফলে লোমকূপ বুজে যায়।দিনে দুবার ,সকালে ও রাতে স্কিনের ক্লেনজিং,টোনিং আর ময়েশ্চারাইজিং জরুরি।
কড়া নয়,সবসময় হালকা ক্লেনজার ব্যবহার করুন।
ক্লেনজিংয়ের সময় প্রথমে গরম জলে মুখ ধুয়ে নিন।এতে বুজে যাওয়া ছিদ্র খুলে যায়।এবার আপনার স্কিনের ধরণ অনুযায়ী ক্লেনজার লাগিয়ে মাসাজ করুন।তারপর ভেজা তুলো দিয়ে মুখ পরিষ্কার করে নিন।
মনে রাখবেন ক্লেনজিংয়ের সময় স্কিনের প্রাকৃতিক পি এইচ লেভেল বদলে যায়,যা ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে টোনার।এছাড়া ক্লেনজিংয়ের ফলে যে ছিদ্র খুলে যায়,টোনার সেগুলো বন্ধ করে।
ত্বকের হারিয়ে যাওয়া আদ্রতা ফিরিয়ে আনতে ত্বক অনুযায়ী ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন। অনেকের ধারণা অয়েলি স্কিন হলে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহারের প্রয়োজন নেই।এটা ভুল ধারণা।
সপ্তাহে ১-২ দিন এক্সফোলিয়েশন ট্রিটমেন্ট করুন।এতে ডেড সেলস সরে গিয়ে স্কিন মোলায়েম,নরম,উজ্জ্বল হয়ে ওঠে।পি এইচ নিউট্রাল এক্সফোলিয়েটিং প্রোডাক্ট ব্যবহার করুন।
নিজের স্কিন অনুযায়ী কসমেটি্কস ব্যবহার করুন এবং তা যেন অবশ্যই নামি কোম্পানির হয়।
অয়েলি স্কিনে অ্যাকনে,ব্ল্যাক হেডস,হোয়াইট হেডস,ডার্ক স্পটের সমস্যা দেখা দেয়।এড়াতে বেশি তেলের,বাইরের খাবার খাওয়া কমান।
ফেশিয়াল
পাওয়ার রেটিনল ফেশিয়াল – এটি অ্যান্টি এজিং ফেশিয়াল।রেটিনলে বয়েসের ছাপ কমায়।স্কিন নরম হয়।সূর্যের ইউ-ভি রশ্মি,ধুলো-পলিউশনের জন্য সিনে যে কালচে ছাপ পড়ে,বুড়োটে ভাবে আসে তা দূর হয়।বলিরেখা,ডার্ক স্পট কমায়।এপিডার্মাল লেয়ারে পুষ্টি যোগায়।
ক্লিয়ার ব্যালান্স ফেশিয়াল – অয়েলি স্কিনে বেশি নোংরা জমে,লোমকূপ বন্ধ হয়ে যায়।তখনই ব্ল্যাক হেডস,ব্রণ বেরোয়।এই ফেশিয়াল স্কিনের নোংরা পরিষ্কার করে তেলের ভারসাম্য বজায় রাখে।এর মধ্যে অ্যান্টিসেপটিক থাকার কারণে স্কিনের ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া নষ্ট করে দেয়।এই ফেসিয়ালের সুবিধে এটি নন পমিডোজনিক,অর্থাৎ লোমকূপ বন্ধ করে না।টিন – এজারদের জন্য খুব উপকারী।
গলা
গলায় কালচে ছোপ দূর করতে শশা,পাতিলেবু বা আলুর রস লাগান।
কমলালেবুর খোসা শুকিয়ে বেটে গলায় লাগান।খানিকক্ষণ রেখে ঠান্ডা জলে ধুয়ে ফেলুন।কালো ছোপ দূর হয়ে ঔজ্বল্য আসে।
মধু আর টম্যাটোর মিশ্রণ গলায় লাগিয়ে খানিকক্ষণ রেখে ধুয়ে ফেলুন।
গলার স্কিন অনেকসময় শুকনো হয়ে যায়।সেক্ষেত্রে প্রথমে দুধ দিয়ে স্কিন পরিষ্কার করে নিন।তারপর কোকো বাটার দুধ আর মধু মিশিয়ে লাগান।খানিকক্ষণ রেখে ধুয়ে ফেলুন।
হলুদ অ্যান্টিসেপটিক।গলার চামড়ায় সংক্রমণ হলে হলুদ আর দুধের মিশ্রণ লাগান।
এক্সফোলিয়েশনের সময় ওপরের দিকে গতিতে মাসাজ করুন।
সাধারণ যত্নআত্তি
হাইড্রেশন বজায় রাখুন: দিনে কমপক্ষে ৮ গ্লাস জল পান করুন। শরীরের ভেতরের আর্দ্রতাই ত্বককে রাখে কোমল ও উজ্জ্বল।
ময়েশ্চারাইজার অপরিহার্য: মুখ ধোয়ার সঙ্গে সঙ্গেই হালকা ময়েশ্চারাইজার লাগান। রাতে ঘুমের আগে ঘন ক্রিম বা তেল ব্যবহার করুন।
সানস্ক্রিন ভুলবেন না: শীতেও রোদ ত্বকের ক্ষতি করে। বাইরে বেরোনোর ২০ মিনিট আগে SPF ৩০ বা তার বেশি সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন।
গরম জলে নয়, কুসুম গরম জলে স্নান করুন: অতিরিক্ত গরম জল ত্বকের প্রাকৃতিক তেল নষ্ট করে দেয়।
পুষ্টিকর খাবার খান: মাছ, বাদাম, অ্যাভোকাডো, অলিভ অয়েল ইত্যাদি ওমেগা–৩ ফ্যাটি অ্যাসিডসমৃদ্ধ খাবার ত্বককে ভেতর থেকে পুষ্টি দেয়।
সপ্তাহে একবার ঘরোয়া মাস্ক ব্যবহার করুন: মধু, দই, অ্যালোভেরা বা কলার প্যাক ত্বককে আর্দ্র ও সতেজ রাখে।
যথেষ্ট ঘুম অপরিহার্য: প্রতিরাতে ৭–৮ ঘণ্টা ঘুম ত্বকের কোষ পুনর্গঠনে সাহায্য করে।
অ্যালকোহল ও অতিরিক্ত ক্যাফেইন এড়িয়ে চলুন: এগুলো শরীরের জলশূন্যতা বাড়ায়, ফলে ত্বক শুষ্ক হয়।
নিয়মিত তেল মালিশ করুন: নারকেল বা বাদাম তেল দিয়ে মুখ ও শরীরে হালকা ম্যাসাজ রক্তসঞ্চালন বাড়ায় ও ত্বককে মসৃণ রাখে।
প্রাকৃতিক লিপ কেয়ার ভুলবেন না: ঘি বা মধু ঠোঁটে লাগালে ফাটল আটকায় ও ঠোঁট থাকে নরম।
খাওয়া দাওয়ার খেয়াল রাখা প্রয়োজন।দুধ,দুধের তৈরি পনির,ছানা,দই,মাখন,এছাড়া কাঠবাদাম,আখরোট ,নারকেল ,ডাবের জল শরীরে নিয়মিত পুষ্টি যোগায়।
প্রতিদিনের ডায়েটে রাখুন,পালং শাক,লেতুজ,গাজর,কুমড়ো,মরশুমি ফল।
ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড ও মাছের তেল স্কিন ভালো রাখে।
চন্দন,পদ্ম,নাগকেশর,মঞ্জিষ্ঠা,খস ও চিনি প্রতিদিন পরিমাণ মতো খেলে ত্বক উজ্জ্বল হয়।
প্রতিদিনের ডায়েটে পর্যাপ্ত মিনারেল,জলীয় উপাদান ও প্রোটিন থাকা প্রয়োজনীয়।
সানবার্ন রুখতে ও দূর করতে তরমুজের সাদা অংশ রড থেকে ফিরে সারা গায়ে ঘষুন।খাঁটি নারকোল তেল সানবার্নের পক্ষে উপকারী,এছাড়া ক্ষীরবালা আর চন্দন তেল (যে কোনও আয়ুর্বেদিক ওষুধের দোকানে পাবেন।
রুক্ষতা কাটাতে অ্যালোভেরা,নিঁ আর চন্দনের মিশ্রণ ব্যবহার করুন।
*এই নিবন্ধটি সাধারণ তথ্যের জন্য যা কোনোভাবে ওষুধ আর চিকিৎসার বিকল্প নয়।অসুখ হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
শেয়ার করুন :





