কোথায় বেড়াতে যাবো মনে করলেই চেনা পাহাড়,সমুদ্র,তাজমহল, জয়পুর,কেরালা কিংবা দার্জিলিং এই পরিচিত নামগুলোই প্রথম মনে আসে। কিন্তু এদেশের অজস্র অপরূপ কোণে এখনো বহু অজানা সৌন্দর্য লুকিয়ে রয়েছে, যা পর্যটকদের পদচারণার অপেক্ষায়। এই সে অর্থে অপ্রচলিত ভ্রমণস্থলগুলোয় রয়েছে প্রকৃতির নিভৃত সুধা, স্থানীয় সংস্কৃতির আসল রঙ, আর এক অন্যরকম অভিজ্ঞতার স্বাদ,যা প্রচলিত গন্তব্যগুলির বাইরে গিয়ে ভারতের প্রকৃত বৈচিত্র্যকে চিনিয়ে দেয়।
এমন ১০ টি অপূর্ব সুন্দর ট্যুরিস্ট স্পটের হদিশ রইল –

১. জুলুক (সিকিম)
বিশেষত্ব: পুরনো সিল্ক রুটের কোলে অবস্থিত ছোট্ট পাহাড়ি গ্রাম জুলুক একসময় ছিল তিব্বত ও ভারতের বাণিজ্য পথের অংশ। আজ এটি মেঘে মোড়া, নিস্তব্ধ অথচ অপূর্ব সুন্দর এক গন্তব্য।
দর্শনীয় স্থান: থাম্বি ভিউ পয়েন্ট, নাথাং ভ্যালি, কুপুপ লেক।
যাতায়াত: গ্যাংটক থেকে প্রায় ৯০ কিমি, গাড়িতে প্রায় ৪ ঘণ্টা। পারমিট প্রয়োজন।
থাকার ব্যবস্থা: স্থানীয় হোমস্টে বা ছোট গেস্টহাউস। সাধারণ কিন্তু আতিথেয়তায় ভরা।
সেরা সময়: মার্চ–জুন ও সেপ্টেম্বর–নভেম্বর।

২. তোশ গ্রাম (হিমাচল প্রদেশ)
বিশেষত্ব: পার্বতী ভ্যালির অন্তরালে অবস্থিত তোশ প্রকৃতির শান্ত কোলে। গিরিখাতের মাঝে ছোট কাঠের বাড়ি, স্বচ্ছ নদী আর পাইনবনের গন্ধে মন ভরে যায়।
দর্শনীয় স্থান: তোশ ঝরনা, কাসোল ও খীরগঙ্গা ট্রেকের প্রান্তে এই গ্রাম।
যাতায়াত: ভুনতার বিমানবন্দর থেকে কসোল হয়ে গাড়িতে পৌঁছানো যায়।
থাকার ব্যবস্থা: ক্যাফে, হোস্টেল, ও হোমস্টে, ব্যাকপ্যাকারদের জন্য আদর্শ।
সেরা সময়: এপ্রিল থেকে অক্টোবর।

৩. চোপতা (উত্তরাখণ্ড)
বিশেষত্ব: হিমালয়ের কোলে থাকা এই গ্রামটি “মিনি সুইজারল্যান্ড অফ ইন্ডিয়া” নামে পরিচিত হলেও এখনো পর্যটকদের কাছে তুলনামূলকভাবে অজানা।
দর্শনীয় স্থান: তুংনাথ মন্দির (বিশ্বের সর্বোচ্চ শিবমন্দির), চন্দ্রশিলা ট্রেক, কেদারনাথ বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য।
যাতায়াত: ঋষিকেশ বা হরিদ্বার থেকে গাড়িতে প্রায় ৮ ঘণ্টার পথ।
থাকার ব্যবস্থা: ক্যাম্প, টেন্ট, লজ। ট্রেকারদের জন্য আদর্শ।
সেরা সময়: এপ্রিল–জুন ও সেপ্টেম্বর-নভেম্বর।

৪. মজুলি দ্বীপ (অসম)
বিশেষত্ব: ব্রহ্মপুত্র নদীর বুকে গঠিত বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ নদী-দ্বীপ। এখানে আজও বেঁচে আছে বৈষ্ণব ধর্মীয় সংস্কৃতি, সত্রিয়া নৃত্য ও প্রাচীন কারুশিল্প।
দর্শনীয় স্থান: কামলাবাড় সত্র, গরমুর সত্র, মিসিং উপজাতির গ্রাম।
যাতায়াত: জোরহাট থেকে ফেরিতে পৌঁছানো যায়।
থাকার ব্যবস্থা: ইকো-রিসোর্ট ও হোমস্টে, নদীর ধারে মনোরম পরিবেশে।
সেরা সময়: অক্টোবর থেকে মার্চ।

৫. কোরাপুট
বিশেষত্ব: ওড়িশার কোরাপুট জেলার অন্তরালে থাকা এই উপত্যকা পর্যটন মানচিত্রে এখনো প্রায় অজানা। ঘন বন, পাহাড়, জলপ্রপাত ও আদিবাসী সংস্কৃতিতে ভরপুর এই অঞ্চল প্রকৃতি ও নৃতত্ত্বপ্রেমীদের জন্য অমূল্য সম্পদ।
দর্শনীয় স্থান: দুধুমা ঝরনা, কোরাপুট জঙ্গল, স্থানীয় ট্রাইবাল হাট।
যাতায়াত: বিশাখাপট্টনম বা জগদলপুর থেকে রেল ও গাড়িতে পৌঁছানো যায়।
থাকার ব্যবস্থা: স্থানীয় সরকার পরিচালিত রেস্ট হাউস ও ট্রাইবাল হোমস্টে।
সেরা সময়: নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি।

৬. মুন্সিয়ারি
বিশেষত্ব: উত্তরাখণ্ডের কুমায়ুনের পাহাড় গঞ্জ মুন্সিয়ারি অপূর্ব নৈসর্গিক পাহাড়ি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে সমৃদ্ধ।নৈনিতাল থেকে ২৬০ কিমি দূরে।মুন্সিয়ারি আসার পথে দর্শণীয় রামগঙ্গা নদী।দেখুন কালামুনি পাস যার মাথায় কালামুনি আশ্রম যেখান থেকে পঞ্চচুল্লি হিমশৃঙ্গ পাহাড়ের গায়ে মুন্সিয়ারি গঞ্জের দৃষ্টিনন্দন সৌন্দর্যে মুগ্ধ হবেন।
দ্রষ্টব্য :ট্রাইবাল মিউজিয়াম,নন্দাদেবীর মন্দির
যাতায়াত : হাওড়া থেকে কাঠগোদাম ট্রেন।সেখান থেকে নৈনিতাল।
থাকার ব্যবস্থা : কুমায়ুন মন্ডল বিকাশ নিগম ট্যুরিস্ট লজ,বিজয় মাউন্ট ভিউ রিসর্ট,ওক হিল রিসর্ট।
সেরা সময়: মার্চ-জুন,সেপ্টেম্বর -নভেম্বর।

৭) ল্যান্ডর
বিশেষত্ব :মুসৌরির ঠিক পাশে নিঝুম নির্জন নিরালা পাহাড়ি জনপদ ল্যান্ডর।রাসকিন বন্ড এখানে থাকেন।মুসৌরি থেকে একবেলা ঘুরে না গিয়ে পাহাড়ি নৈঃশব্দ উপভোগ করতে ল্যান্ডর আপনার অসাধারণ ভালো লাগবেই।
দ্রষ্টব্য:কেলগস মেমোরিয়াল চার্চ,সিস্টার্স বাজার,ল্যান্ডর বেকহাউস,অনিল প্রকাশ স্টোরের হোমমেড জ্যাম,পিনাট বাটার,চিজ,এমিলিস,সেন্ট পল চার্চ।
যাতায়াত :দেরাদুন থেকে মুসৌরি হয়ে।
থাকার ব্যবস্থা : লা ভিলা বেথানি,রকেবি ম্যানর,জোস্টেল।
সেরা সময় :মার্চ- জুন,সেপ্টেম্বর -নভেম্বর।

৮) মহেশ্বর
বিশেষত্ব :মধ্যপ্রদেশের ইন্দোর থেকে ৯২ কিমি দূরে অতীতের মাহিষ্মতী এই মহেশ্বর।দুর্ভেদ্য দুর্গপ্রাসাদ,নানামহল,রানী অহল্যাবাঈয়ের সিংহাসন,শিবমন্দির,রঙিন নৌকায় বোটিং,রাজরাজেশ্বর মন্দির
দ্রষ্টব্য:আহিলেশ্বর মন্দির,অহল্যাবাই ঘাট,সহস্রধারা,কাশীবিশ্বনাথ মন্দির,কুইন্স ফোর্ট।
যাতায়াত :হাওড়া থেকে ট্রেনে ইন্দোর,সেখান থেকে সড়কপথে।
থাকার ব্যবস্থা : নর্মদা নদীর পাশে মধ্যপ্রদেশ ট্যুরিস্ট লজ ,কাঞ্চন রিক্রিয়েশন। সেরা সময় : অক্টবর থেকে মার্চ।

৯) মলুটি
বিশেষত্ব :বাংলা ঝাড়খন্ড সীমানায় দুমকা জেলার গ্রাম মলুটি।এই গ্রামকে ‘গুপ্ত কাশী’ বলা হয়।
দ্রষ্টব্য:অপূর্ব টেরাকোটা মন্দির।এখন ৭২টি মন্দির আছে।বিষ্ণুপুর শিল্পীদের তৈরি এই মন্দিরগুলোয় রামায়ণ মহাভারতের কাহিনী দেওয়াল জুড়ে।প্রাচীন মন্দিরের মধ্যে অন্যতম দেবী মৌলিক্ষা মন্দির।সাধক বামাখ্যাপা এই মন্দিরে বসে সাধনা করেছিলেন।
যাতায়াত :মলুটি রামপুরহাট থেকে ১৬কিমি।
থাকার ব্যবস্থা : রামপুরহাট হোটেল বীরভূম ইন্টারন্যাশনাল,ল্যারিকা হলিডে ইন।
সেরা সময় : অক্টবর – মার্চ।

১০) চাঁদ বাওড়ি
বিশেষত্ব :নবম শতাব্দের এই আশ্চর্য কুয়োর নির্মাণ।এর প্রতি পরতে চাঁদের আলো নামে।রানীদের জন্য গ্রীষ্মকালে জলে ভোরে থাকতো আর বসন্তের বিকেলে এর সিঁড়ির ধাপগুলোতে বসত গল্পের আসর।কুয়োর সিঁড়িগুলো জ্যামিতিক আকারে তৈরি।ভারতের অন্যতম বিখ্যাত এই স্টেপওয়েল।হলিউডের ছবি ‘ডার্ক নাইট রাইজেস’ ছবির শুটিং হয়েছে এখানে। পূর্ণিমা রাতের সৌন্দর্য অপূর্ব।
যাতায়াত : রাজস্থানের জয়পুর থেকে একটি নির্দিষ্ট স্থান অবধি গাড়ি আর সেখান থেকে হেঁটে।
থাকার ব্যবস্থা : বোনশ্রায়া সিসোর্ট সরিস্কা,সূর্য ভিলা অভিনেরি।
সেরা সময় : অক্টবর – মার্চ।
শেয়ার করুন :





