ভারতের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত হওয়ার কারণে ‘হার্ট অফ ইনক্রেডিবল ইন্ডিয়া ‘ আখ্যায় ভূষিত।ঐতিহ্যশালী সমৃদ্ধ ইতিহাস,প্রাসাদ ,দুর্গ, প্রাণবন্ত নয়নাভিরাম দর্শনীয় স্থান,ভারতে বাঘেদের রাজধানী ,৫টি ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট মধ্যপ্রদেশে একবার না এলে জীবন বৃথা মনে করেন ভ্রমণকারীরা।অপরূপ মন্ত্রমুগ্ধ মধ্যপ্রদেশের বিশেষ আকর্ষণীয় ট্যুরিস্ট স্পটের হদিশ রইল :
ভোপাল:ভোপালকে ‘সিটি অফ লেকস’ বলা হয়।ভোজতাল বা বড়া তালাও ভারতের মানুষের তৈরি সবচেয়ে বড় লেক হিসেবে প্রখ্যাত।রাজা ভোজ এই তালাও ১১শ শতাব্দীতে নির্মাণ করেন। ‘তাজ -উল মসজিদ ভারতের অন্যতম বৃহৎ মসজিদ।এখানকার অন্যতম প্রসিদ্ধ রাষ্ট্রীয় মানব সংগ্রহালয়তে ভারতের ৪৫০ এর বেশি আদিবাসী জীবনকথার ইতিবৃত্ত আছে ।ভোপালের অন্যতম দ্রষ্টব্য স্থানের মধ্যে রয়েছে গওহর মহল,বিড়লা মন্দির,বন বিহার ন্যাশনাল পার্ক,রাষ্ট্রীয় মানব সংগ্রহালয়,ট্রাইবাল মিউজিয়াম,রিজিওনাল সায়েন্স সেন্টার,কেরোয়া ড্যাম।
ভীমবেটকা গুহা :আনুমানিক ১ লক্ষ বছর আগে হোমো ইরেক্টাস প্রজাতির বসবাস ছিল যা ভারতে সবচেয়ে প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শন।সেই আদিম মানবের পাথরের গায়ে আঁকা ছবি যার কোনো কোনোটার বয়েস ৩০,০০০ বছরের বেশি।কিংবদন্তি অনুযায়ী মহাভারতে ভীম নাকি বনবাসের সময় এখানে পাথরের আসনে বসতেন ,তাই থেকে নাম ভীমবেটকা।
সাঁচিস্তুপ:৩য় শতাব্দী মৌর্য্য সম্রাট অশোকের সাম্রাজ্যে নির্মিত থেকে ৫ম শতাব্দী গুপ্ত সাম্রাজ্য হয়ে ১২শ শতাব্দী ধরে সচল ভারতীয় স্থাপত্যের অন্যতম প্রাচীন পাথরের কাঠোমোর বুদ্ধ মঠ স্মৃতিসৌধ। এখানে অনেকগুলি স্তুপ রয়েছে যার মধ্যে সাতধারা,সারিপুত্রের ধ্বংসাবশেষ, মহামোগ্গল্লানা, ভোজপুর, অন্ধের উল্লেখযোগ্য।
পাঁচমাড়ি : মহাভারতে বর্ণিত পাণ্ডবদের ১৩বছর বনবাসের সময়কালে তৈরি এই পাঁচমারি গুহা।এখানে ব্রিটিশদের ক্যান্টনমেন্ট ছিল। ২০০৯ সালে ইউনেস্কোর বায়োস্ফেরিয়াল রিসার্ভ স্বীকৃতি।এখানে প্যারা গ্লাইডিং আর বোটিংয়ের রোমাঞ্চ,শিহরণের পুলক উপলদ্ধি অন্যতম আকর্ষণ।বিশেষ দ্রষ্টব্য :রজত প্রপাত ঝর্ণা,বড়া মহাদেব,গুপ্ত মহাদেব, শিবস্থান চৌরাগড়,সাতপুরের সর্বোচ্চ স্তন ধূপগড়,হান্ডি খো উপত্যকা ,অপ্সরা ফলস,পাঁচমাড়ি হিলস,সাতপুরা তাদের রিসার্ভে বাঘ,চিতা,বন্য শুয়োর,গাউর,চিতল,চিঙ্কারা,নীলগাই,নেকড়ে ,দৈত্যকায় আর উড়ন্ত কাঠবেড়ালি,৩০০ প্রজাতির পাখি।ভোপাল থেকে ৪ ঘন্টা এবং পিপারিয়া রেলওয়ে স্টেশন থেকে ৪৭ কিমি।
ভেদাঘাট :জব্বলপুরে নর্মদা নদীতে মার্বেল রক্সের মনোহর মাধুর্য্যের রূপলাবণ্য।চাঁদনী রাতে এই নদীতে মার্বেল রক্সের মধ্যে নৌকাবিহার জীবনে অতুলনীয় অনুপম স্মরণীয় হয়ে থাকবে।এর মধ্যে অন্যতম আকর্ষণ ধুঁয়াধার ফলস।অন্যান্য দর্শনীয় স্থান : ব্যালেন্সিং রকস,চৌসাথ যোগিনী মন্দির।
খাজুরাহো : দশম শতাব্দীতে চান্দেল রাজত্বকালে নির্মিত।এই মন্দিরে অপূর্ব মৈথুন ভাস্কর্যের সৌন্দর্য্য ও গুরুত্ব অপরিসীম।কিংবদন্তি আর লোককথা অনুযায়ী সেই সময় চান্দেলা রাজাদের সঙ্গে তান্ত্রিক বামমার্গ শাখার যোগাযোগ ছিল যে সম্প্রদায়ের লোকেরা যোগ এবং ভোগ দুইকেই মোক্ষের উপায় বলে গণ্য করতেন।এটি প্রাচীন হিন্দু ও জৈন মন্দিরের সমষ্টি।এই স্থাপত্যের শ্রেষ্ঠ নিদর্শন কান্দারিয়া মন্দির।
কানহা টাইগার রিসার্ভ : পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ বনাঞ্চল।সাতপুরার মৈকাল রেঞ্জে অবস্থিত।বিখ্যাত লেখক রুডিয়ার্ড কিপলিংয়ের ‘জাঙ্গল বুক’এই কানহার জঙ্গলের গল্প।মৈকাল পাহাড়শ্রেণীর ৯৪০ কিমি অঞ্চল জুড়ে এই জঙ্গলে বাঘ ছাড়াও আছে প্যান্থার,চিতল,সাম্বার,বারাসিঙ্গা,বার্কিং ডিয়ার,ব্ল্যাক বাক হরিণ,গাউর,লেঙ্গুর,ভাল্লুক,শেয়াল,পাইথন,গোখরো,রাসেল ভাইপার,ইন্ডিয়ান ক্রেইট ,৩০০ প্রজাতির পাখি।টাইগার সাফারি ,সানসেট পয়েন্ট মিস করলে ঠাকুর পাপ দেবেন।
গোয়ালিয়র: ষষ্ঠ শতাব্দীতে সুরজ সেন দ্বারা প্রতিষ্ঠিত,নবম শতাব্দী গুর্জর প্রতিহার সাম্রাজ্য,ইলতুৎমিশের আক্রমণ ও মোঘল শাসনকাল,রাজা বীর সিং ও পরে রাজা মান সিংয়ের অতুলনীয় মান মন্দির প্যালেস সৃষ্টি, অপরূপ জৈন স্থাপত্য যা ঐতিহ্য বিজড়িত গোয়ালিয়র ফোর্টের অন্যতম আকর্ষণ,১৮৫৭ সালে সিপাহী বিদ্রোহে ইংরেজদের সঙ্গে ঝাঁসি রানী লক্ষ্মীবাঈয়ের যুদ্ধ,সিন্ধিয়া রাজপরিবার, সঙ্গীত সম্রাট তানসেন আর শাস্ত্রীয় সংগীতে গোয়ালিয়র ঘরানা যার উত্তরসূরি উস্তাদ হাফিজ আলী খান ও উস্তাদ আমজাদ আলী খান।দেখতেই হবে গোয়ালিয়র ফোর্ট,মান মন্দির প্যালেস, শ্রী সহস্রবাহু বিষ্ণু মন্দির,জয় বিলাস প্যালেস,সান টেম্পল,তানসেন স্মৃতিসৌধ,মহারাণী লক্ষ্মীবাই স্মৃতি সৌধ।
ওরছা:গোয়ালিয়র থেকে ৭৫ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত।ভারতে ওরছা একমাত্র শহর যেখানে রামচন্দ্রকে রাজা রূপে মান্য করা হয় এবং এখনও প্রতিদিন পুলিশ তাঁকে গার্ড অফ অনার সন্মান প্রদর্শন করেন ।১৫৩১ খ্রিস্টাব্দে বুন্দেলা রাজপুতদের স্থাপিত রাজধানী।পরে ১৬শ শতাব্দীতে রাজা রুদ্র প্রতাপ এর বিকাশ এবং সম্প্রসারণ করেন।বুন্দেলা রাজবংশের অতুলনীয় অনন্য স্থাপত্যশৈলীর জন্য প্রসিদ্ধ।রাজ মহল,জাহাঙ্গীর মহল,রাম রাজা মন্দির বিখ্যাত দ্রষ্টব্য স্থান।
মান্ডু :রূপমতী ও বাজবাহাদুরের অমর প্রেমকথা ও বিয়োগান্তক পরিণীতি বিজড়িত এই পাথরের দুর্গ।শৌর্য,প্রেম ,আধ্যাত্মিকতার সহাবস্থান।তালানপুরের শিলালিপি থেকে জানা যায় চন্দ্রা সিংহ আনুমানিক ষষ্ঠ শতাব্দীতে পার্শ্বনাথ মন্দিরে একটি মান্ডভ দূর্গা মূর্তি স্থাপন করেন।এই দূর্গা নগরী অনন্য অনুপম স্থায়পত্যশৈলীর জন্য বিখ্যাত।মান্ডুর কাছে এলেই দিগন্তব্যাপী মালভূমি,পাহাড় আর জঙ্গলের প্রাকৃতিক নির্সগের অপরূপ সৌন্দর্য্যে মুঘ্ধ হতে হয়।১৫৫৪ সালে আফগান শাসনকালে সুজাত খানের পুত্র বাজে বাহাদুর ক্ষমতায় আসেন,তিনি অসাধারণ সংগীতশিল্পী ছিলেন ,তার রবাবের বাজনায় মন্ত্রমুগ্ধ রূপমতীর প্রেমকথা,পরে সম্রাট আকবরের রূপমতীর প্রতি আসক্তি ও মোঘল সেনা দুর্গ ঘিরে ফেলার পর রূপমতীর বিষপানে আত্মহত্যা ও পরে বাজে বাহাদুরের মৃত্যুর আখ্যান লোককথা অনুযায়ী এখনও মান্ডুর পাথরের দেওয়ালে প্রতিধ্বনি করে বেড়ায়।প্রাসাদের ছাদ থেকে পার্বত্য পটভূমি অধ্যুষিত নর্মদা দর্শনের সৌন্দর্য অনুপম।
অপরূপ মধ্যপ্রদেশ বিশদে দেখতে ও জানতে ক্লিক করুন –
শেয়ার করুন :