এই দেশের মেয়েদের প্রতি এমন একটা প্যাট্রিয়ার্কাল ধারণা যেন তারা সর্বংস্বহা।সাত চড়ে রা’ কাটবেনা।কিন্তু এতে মেয়েদের একান্ত ব্যক্তিগত সমস্যার সমাধান তো হয়ই না ফলে এর ফলে পারিবারিক বিপত্তি,ঝঞ্ঝাট,অশান্তি বেড়ে যায়।দিন বদলেছে।মেয়েরা আগের থেকে তুলনামূলক ভাবে অনেক স্বাধীন হলেও এমন অনেক মেয়েলি সমস্যা প্রায়শই তাদের সম্মুখীন হতে হয় যা এই গত একবছরের ভয়ঙ্কর কোভিডকালে অনেকাংশে বেড়েছে। অভিজ্ঞ সাইকিয়াট্রিস্টদের কাছে প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে সমাধানের হদিশ- ১ম পর্ব।
দিদি ফ্রেন্ড,ফিলোজফার অ্যান্ড গাইড।তাকে বোন খুব ভরসা করে,ভালোবাসে।কিন্তু এর থেকে একটা হিংসে,কমপ্লেক্স বেড়ে যায় কারণ মনে হয় যাই করুক না কেন দিদিই ভালো করবে আর সে মামুলি।
একে সিবলিং রাইভলরি বলে।এটা নতুন সিনড্রোম নয়।বোন দিদিকে যতই ভালোবাসুক না কেন এক্ষেত্রে বোনকে তার নিজস্ব আইডেন্টিটি গড়ে তুলতে হবে আর দিদি যে বিষয়ে পারদর্শী সেই বিষয়ে কম্পিটিশনের বদলে অন্য বিষয় বেছে নিয়ে সেখানে নিজের পারদর্শিতা দেখালে ভাল হবে আর সর্বদা তুলনা করা বন্ধ হবে।আর গুরুজন,আত্মীয়স্বজন,বন্ধুবান্ধব যদি এই বিষয়ে প্রতিনিয়ত তুলনামূলক ‘দিদিকে দেখে শেখ’ এই দুঃসহ তুলনা করে তাদের দৃঢ় কিন্তু সৌজন্য রেখে পরিষ্কার করে বলতে হবে এতে ক্ষতি হচ্ছে আর এই বিষয় একদম সহ্য করা যাবে না।অনেক ক্ষেত্রে এই রুখে দাঁড়ানোয় কাজ দিয়েছে আবার চুপ করে সহ্য করে গুমরে দিন কাটাতেও দেখা গেছে।
কলেজে থার্ড ইয়ারের ছাত্রী।কোনও বয়ফ্রেন্ড নেই।বন্ধুদের আড্ডায় তাদের প্রেমের কাহিনী শুনে হতাশা আর ‘অড ওম্যান আউট’।এদিকে এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় আলাপের.সম্পর্কের এত ভয়াবহ পরিণীতির কথার সংবাদে আরও গুটিয়ে থাকা নিয়ে ইনফিওরিটি কমপ্লেক্স।
এখনকার প্রজন্মের ইয়াং জেনরা টিনএজের পরেই বয়ফ্রেন্ড না থাকলে হীনমন্যতায় ভুগছে।এর কারণ তাদের একাকীত্ব আর সঙ্গে বন্ধু বান্ধবদের বিদ্রুপ।কিন্তু বুঝতে হবে বয়ফ্রেন্ড থাকাটাও যেমন স্বাভাবিক না থাকাটাও অস্বাভাবিক নয়,তাই এই সমস্যাকে একদম পাত্তা না দেওয়া।উল্টে এখনকার সুপার ফাস্ট লাইফে প্রেম হতে,ব্রেক আপ হতে,সেই নিয়ে ডিপ্রেসেড থাকায় খুব ফাস্ট হয়ে যাওয়ায় সেই নিয়েও তো বিপত্তি কম নয়।নিজের পড়াশোনা,গান বাজনা,বই,সিনেমা,ভালো বন্ধু নিয়ে এবং একটু চারপাশে,সোশ্যাল মিডিয়ায়,কমন ফ্রেন্ড সার্কেলে ধৈর্য্য ধরে কেয়ারফুল খোঁজ খবর নিলেও সিদ্ধি মিলতে পারে কিন্তু তার জন্য আকুল ব্যাকুল হওয়ার কোনও প্রয়োজন নেই।
বয়েস ২০।মা এখনও খুব সুন্দরী আর নিজেকে মেন্টেন করে।সেই তুলনায় মেয়েকে তেমন ভাল দেখতে নয় বলে যে কোনও অনুষ্ঠানে লোকে মায়ের রূপের প্রশংসায় আর প্রতি তুলনায় শুধু ইনফিওরিটি কমপ্লেক্স নয় এই কারণে মায়ের সঙ্গে দূরত্ব তৈরী হচ্ছে –
মা মেয়ের মধ্যে অনেকসময় একটা না বলা নিঃশব্দ প্রতিদ্বন্দ্বিতা চলে যেটা এমন ক্ষেত্রে আরও বেড়ে যায়।এক্ষত্রে মেয়ের চেয়ে মাকে সদর্থক ভূমিকা নিতে হবে।একটি সাক্ষাৎকারে শর্মিলা ঠাকুর বলেছিলেন যে ছোটবেলায় তার কন্যা সাবা (সোহা নয়) র ওয়েট বেশি নিয়ে উনি দু একবার বলার পর খুব সোজা সহজ স্বরে সাবা বলেছিল,’ যখন আমার চেহারা মা হয়ে তুমিই সহ্য করতে পারছনা তাহলে বাকি পৃথিবী কি করে আমায় সহ্য করবে?’ শর্মিলা ভয়ানক লজ্জিত হয়ে মেয়ের কাছে ক্ষমা চেয়েছিলেন আর জীবনে এই বিষয়ে কোনও কথা বলেন নি।এক্ষেত্রে মেয়েকে মায়ের রূপ সৌন্দর্য্য ভুলে নিজের গুণাগুণের,স্বকীয়তার কথা এবং মা কে মেয়ের সেই দিকগুলি উদ্ভাসিত করার জন্য লক্ষ্য রাখতে হবে আর এই চেহারা নিয়ে কোনও কম্প্যারেটিভ আলোচনা যে মা মেয়ের দুজনেরই অপছন্দ না নম্র অথচ দৃঢ় ভাবে সবাইকে জানিয়ে দিতে হবে।
পৈতৃক সম্পত্তি থেকে দুই বোনকে বঞ্চিত করতে চাইছে ভাই।যুক্তি তাদের বিয়েতে ১০ লক্ষ্ টাকা খরচ হয়ে গেছে।তাই,এই সম্পত্তির পুরো অধিকার তার।
কোনও ব্যক্তি মৃত্যুর আগে কোনও দানপত্র/উইল করে না গেলে তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর সম্পত্তি বিধবা স্ত্রী এবং ছেলে মেয়েদের মধ্যে সমান অংশে ভাগ হবে।এই অবস্থায় কোনও ভাই কোনওরকম যুক্তিতেই,আইনেই তার বোনদের পৈতৃক সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করতে পারে না।
স্বামীর এমনিতে সব ভাল।একটাই প্রধান সমস্যা যেটা স্ত্রীর কাছে ভীষণ অপমানকর।তার বাপেরবাড়ির বিষয়ে সম্পূর্ণ উদাসীন।বাবা মার্ শরীর খারাপ যাওয়া তো দূর খোঁজখবর পর্যন্ত রাখেনা উপরন্তু বাপের বাড়ি যাওয়া নিয়েও সমস্যা আর রাত কাটাতে দেয় না এদিকে নিজের মায়ের কিছু হলে স্ত্রীকে রাতদিন সেবা করতেই হবে।
প্রতিটি বিয়েতেই কম বেশি কিছু সমস্যা থাকে যা নিজেদের বোঝাপড়া করে ঠিক করে নেওয়া হয় আর এই সমস্যাগুলি অধিকাংশেই ব্যক্তি এবং সম্পর্ককেন্দ্রিক।এক্ষেত্রে অবশ্যই স্বামীকে পরিষ্কার করে বুঝিয়ে বলতে হবে দুজনের বাবা মার্ ক্ষেত্রে দুরকম ট্রিটমেন্ট,পার্থক্য সহ্য করা হবে না।উনি যেতে না দিলে মেনে নেওয়া যাবে না কিন্তু দেখতে না গেলে সেটা নিয়েও কোনও বিবাদ বাঞ্ছনীয় নয় কারণ ব্যক্তিগত রুচি।এ বিষয় কঠোর কিন্তু বুঝিয়ে বলে সমস্যার সমাধান করতে হবে কারণ অতীতে এমন মেনে নিতে নিতে মেয়েদের অধিকারের বিষয়টা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
লকডাউনে প্রাইভেট স্পেসে শাশুড়ি।এই সময়ে স্ত্রীর কাজে সহযোগিতায় শুনতে হচ্ছে বৌ পাগল ছেলে আর স্বামীর একটু কিছুতে আহারে সোনা বলে বেডরুমে স্বামীর পাশে বসে আমার ছেলের কি হল, একদম যত্ন আত্তি হচ্ছে না।সামান্য মাথাধরাতেই ইশ ছেলেটার কি অযত্ন..
অনেক মা তার সন্তানের অধিকার ছাড়তে চান না আর একটা মানসিক সমস্যা যে বৌ তার ছেলেকে বশ করে নেবে আর সংসারে তার প্রাধান্য,কতৃত্ব থাকবে না।এর সমাধানে ছেলেকেই এগিয়ে আসতে হবে বলে বুঝিয়ে বলতে হবে আর এটা যে মুখ বুজে সহ্য করা হবে না সেটা চেঁচামেচি ,অশান্তি না করে শান্ত থেকে বুঝিয়ে বলতে হবে।মা কে মনোবিদের কাছে নিয়ে যাওয়ায় একটা ভালো প্রস্তাব কিন্তু পুরুষতান্ত্রিক সমাজের তথাকথিত নিয়ম মেনে চুপচাপ সহ্য করা যাবে না।
শেয়ার করুন :