এসে গেল বড়দিন।পৃথিবীর নানা দেশে নানা প্রচলিত ধারায় খ্রিস্টমাস উৎসবের অবাক করা গল্প।
১) ফিলিপিন্সের জায়ান্ট ল্যান্টার্ন ফেস্টিভ্যাল
ফিলিপিন্সের স্যান ফার্নাদো শহরকে খ্রিষ্টমাস ক্যাপিটাল বলা হয়।এই জায়ান্ট ল্যান্টার্ন ফেস্টিভ্যালের স্থানীয় নাম ‘লিগলিয়ান পারুল স্যামপার্নেন্দু’।১১ টি গ্রাম এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে আর তাদের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি প্রতিযোগিতা চলে কাদের ল্যান্টার্ন সবচেয়ে বড়।দেশ বিদেশ থেকে এই প্রতিযোগিতা দেখতে অসংখ্য পর্যটক ভিড় করেন।আগে এই ল্যান্টার্ন তৈরী হত ‘প্যাপেল দে হাপন’ অর্থাৎ জাপানি অরিগামি কাগজ দিয়ে আর তার ব্যাসার্ধ হত আধ মিটার।এখন কম্পিটিশন আর আধুনিকতার জন্য এর ব্যাসার্ধ বিশাল ৬ মিটার আর অত্যাধুনিক সামগ্রী ব্যবহার করা হয় আর ইলেক্ট্রিক আলো ক্যালাইডোস্কোপের আকারে সাজানো হয়।
২)ইয়েভ্লে গোট-সুইডেন
এই উৎসব প্রথার শুরু ১৯৬৬ সাল থেকে।প্রতিবছর না হলেও খ্রিস্টমাসের সময় খড় আর অন্যান্য দাহ্য বস্তু দিয়ে ১৩ মিটার লম্বা এই বিশালাকায় ছাগলটিকে ইয়েভলে ফোর্টের কেন্দ্রস্থলে সাজানো হয় আর কিছু বছর অন্তর আশ্চর্য ট্র্যাডিশন অনুযায়ী এটাকে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়।এখনও পর্যন্ত ২৯ বার জ্বালানো হয়েছে।
৩) ক্র্যাম্পাস -অস্ট্রিয়া
খ্রিস্টমাসে সান্তা ক্লস ছোট বাচ্চাদের উপহারের মধুর প্রথার সম্পূর্ণ বিপরীতে এই সময় পশুরূপী শয়তানের সাজে পুরাণকথার সেন্ট নিকোলাসের শয়তান সহযোগী ক্র্যাম্পাসের বেশে শহরে ঘুরে বেড়ায় এই দানব আর দুরন্ত বাচ্চাদের ভয় দেখিয়ে তার ঝোলায় পুরে নিয়ে যাওয়ার অভিপ্রায় নিয়ে।অবশ্য পুরোটাই খেলাচ্ছলে।তরুণ ছেলেরা ভয়ঙ্কর ক্র্যাম্পাস সেজে পিঠে ঝুলি হাতে শেকল নিয়ে রাস্তায় ঘুরে বেড়ায়।
৪) সেন্ট নিকোলাস ডে-জার্মানি
সান্তা ক্লস নয়,প্রথা অনুযায়ী ৬ ডিসেম্বর সন্ধ্যে থেকে সেন্ট নিকোলাস জার্মানির বিশেষত ব্যাভেরিয়া অঞ্চলে ঘুরে ঘুরে ছোট বাচ্চাদের স্কুলে,বাড়িতে চকোলেট, লজেন্স, কমলালেবু, খেলনা উপহার দেন তার পরিবর্তে বাচ্চাদের ছবি এঁকে,কবিতা বলে,গান গেয়ে তাঁকে খুশি করতে হয়।কিন্তু সেন্ট নিকোলাসের সঙ্গে ক্র্যাম্পাস নাম ভয়ঙ্কর পশুরূপী দানবও থেকে সঙ্গে ঝোলা আর শেকল নিয়ে দুস্টু বাচ্চাদের ভয় দেখানোর জন্য।
৫)ঝেঁটা লুকোনো- নরওয়ে
প্রায় ১০০ বছরের বেশি সময়ের এই প্রথাযা নরওয়ের বাসিন্দারা এই সময় তাদের ঝেঁটা লুকিয়ে রাখে।প্রবাদ অনুযায়ী এই সময়ে উইচেরা অর্থাৎ ভূতেরা ঝাঁটায় চেপে ঘোরার জন্য বাড়ি বাড়ি ঝেঁটা সন্ধান করে তাই সবাই বাড়িতে ঝেঁটা লুকিয়ে রাখে।হ্যারি পটার মনে নেই?
৬) লিটল ক্যান্ডেলস-কলম্বিয়া
ভার্জিন মেরির সন্তানধারণের আনন্দ উদযাপনের উৎসব দিয়ে খ্রিষ্টমাস উৎসব শুরু হয় এখানে।বাড়িতে বাড়িতে বারান্দায় দেওয়ালির মত মোমবাতি,ফানুস দিয়ে নানা রঙের আলো সাজিয়ে রাখে।কুইমবায়াতে এই আলো সাজানোর প্রতিযোগিতা হয় যেটা সবাইকে মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখে।
৭) রোলার স্কেট,তামারেলস -ভেনিজুয়েলা
এখানে খ্রিষ্টমাস ইভে সবাই চার্চে যান।এতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই,এই সময় সবাই যায়,কিন্তু এরা যান রোলার স্কেটিং করে।এই দিনে ভেনিজুয়েলার ক্যারাকাস শহরে গাড়ি চালানো নিষিদ্ধ। রোলার স্কেটিং করে চার্চে যাওয়া ,ক্যারোলের পর ফিরে এসে পরম্পরা অনুযায়ী কর্ণ ৱ্যাপের মধ্যে মাংসের পুর ভরা রকমারি ‘তামারেলস’ খাওয়া।
৮) ইউল ল্যাডস-আইসল্যান্ড
খ্রিস্টমাসের ১৩ দিন আগে থেকে শুরু হয় এই উৎসব।ওখানকার ১৩টি ট্রিক্সি ট্রোল সাজে সেজে ১৩ দিন ধরে এই ইউল্যাডসরা প্রতি রাতে বাচ্চাদের বাড়িতে যায় কারণ বাচ্চারা প্রতি রাতে তাদের সবচেয়ে ভালো জুতো জানলার ধরে সাজিয়ে রাখে।মজার প্ৰথা অনুযায়ী ভালো ছেলেমেয়েদের চকোলেট,খেলনা ,উপহার আর দুস্টু ছেলেমেয়েদের জন্য পচা আলু রেখে যায়।
৯) আমন্ড পরিজ -ফিনল্যান্ড
এই সময়ে প্রথা অনুযায়ী ফ্যামিলি ডিনারে ঐতিহ্যশালী পরম্পরা অনুযায়ী চাল,দুধ মাখন,চিনি দিয়ে তৈরী পরিজ খাওয়া হয় আর যার পরিজের মধ্যে আমন্ড পাওয়া যাবে সে উপহার পাবে।তবে বাচ্চাদের নিরাশ না করার জন্য বাবা মায়েরা পরিজের মধ্যে একটার জায়গায় বেশি আমন্ড দিয়ে দেন যাতে সবাই খুশি থাকে।
১০) নিসার -ডেনমার্ক
খ্রিস্টানিটি আসার আগে থেকেই ডেনমার্কে ২১সে ডিসেম্বরে উইন্টার সলস্টিসের সময় রৌদ্রোজ্জ্বল দিনে খ্রিষ্টমাস ডে পালন হত।এখনও এই সময়ে সবার বাড়িতে নর্ডিক লোককাহিনীর রক্ষাকর্তা দেবতা ‘নিসার’এর ছবি টাঙানো হয় আর ঘরের মধ্যে খ্রিষ্টমাস ট্রি সাজিয়ে সবাই তার চারিদিকে ঘুরে নাচ গান করে।
শেয়ার করুন :