১৯২২ সালের ১৬ই অগাস্ট রামমোহন লাইব্রেরি হলে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বর্ষামঙ্গল অনুষ্ঠান করেছিলেন।উনি এই লাইব্রেরির পরিচালক মণ্ডলীতেও ছিলেন।সেদিনের অনুষ্ঠানের বর্ণনা মাদাম সিলভা লেভির লিখনে,“ছয়টায় শুরু। আমরা ঠিক সময়ে দর্শকে ঠাসাঠাসি সুদৃশ্য নাট্টালয়ে গিয়ে আসন গ্রহণ করলাম। গুটি কয় ইউরোপিয়ান, বড়জোর জনা পনেরো। শোভন সুবেশ দর্শকদের সমাবেশ। অপূর্ব সব অলংকার। গহনার পাথরগুলি যে শুধু দামি তা নয়, সেগুলি যার উপর বসানো তাও সমান মূল্যবান। ঝলমলে শাড়ি, পুরুষদের হিমশুভ্র পোশাক। সব মিলে একটা ছিমছাম নিখাদ, নিপাত সৌখিনতা আর মার্জিত রুচির পরিচয়। পর্দা উঠলো। গায়িকাদের পরনে লাল পাড় সাদা শাড়ি, গায়কদের মাথায় এক ধরনের লাল পাগড়ি। পিছন দিকে মাছ বরাবর দিল খোলা দিনু বাবু। (দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর)। তার সামনে মঞ্চের পুরো ভাগে গায়ক বাদক বিনা বাউলের একতারা। চিত্রশিল্পী অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর এসরাজ বাজাচ্ছেন। অনুষ্ঠানের প্রথমেই তাপদগ্ধ গ্রীষ্মের অবসানে বর্ষার আহ্বান। আর সেই মুহূর্তে প্রচন্ড শব্দের ডেকে উঠল মেঘ। ঝমঝম করে এক পশলা বৃষ্টি এলো। আমরা চমকে উঠলাম। দেবতার আশীষ ধন্য অশেষ গুণের অধিকারী সন্তানটির আহবানে এ যেন তাঁদের সাড়া। সেই সময় এই অনুষ্ঠান উপলক্ষে বর্ষার ১৮টি গান নিয়ে ১৬ পৃষ্ঠার একটি পুস্তিকা প্রকাশ করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তার মলাটে লেখা ছিল “বর্ষামঙ্গল। দাম চার আনা।”
‘আজি হতে শতবর্ষ পরে’ঐতিহ্যশালী রামমোহন লাইব্রেরি এই বর্ষামঙ্গল অনুষ্ঠানের শতবর্ষ উদযাপনে নিবেদন করলেন ,’শতবর্ষে বর্ষামঙ্গল’।উল্লেখিত মাদাম সিলভির লেখাটি পাঠ করলেন ডঃ শঙ্কর নাথ। ‘শতবর্ষে বর্ষামঙ্গল’ গীতিআলেখ্য গ্রন্থনা ও সংযোজনায় চৈতালি গঙ্গোপাধ্যায় ভট্টাচার্য্য ও সংগীত পরিচালনায় ছিলেন রচয়িতা রায় দত্ত। অনুষ্ঠান পরিচালনায় ছিলেন শুভাশিস দত্ত।
সশ্রদ্ধচিত্তে স্মরণীয় এই ঐতিহ্যশালী,বহু মনীষীর স্মৃতিবিজড়িত লাইব্রেরিতেই নোবেল পুরস্কার পাওয়ার পর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে প্রথম সম্বর্ধনা দেওয়া হয়।
আজকের সামাজিক অবক্ষয়ের যুগে দাঁড়িয়ে রামমোহন লাইব্রেরি এই মনোজ্ঞ অনুষ্ঠান আয়োজন করেছেন এর জন্য অজস্র সাধুবাদ ও কৃতজ্ঞতা।আজকের মোবাইল সর্বস্ব,ফেক নিউজ আর পোস্টের পৃথিবীতে বাঙালি সাহিত্য সংস্কৃতি ,নিজের ভাষা আর শেকড়কে জানার জন্য লাইব্রেরির অপরিসীম গুরুত্ব আর প্রচার ও প্রসার অত্যন্ত জরুরি আর এখানেই রামমোহন লাইব্রেরির মাহাত্ম্য।
অনুষ্ঠানের তথ্য ও ছবি-অতীশ দত্ত
শেয়ার করুন :