কমলেন্দু সরকার
এখন বলার কেউ নেই তাই বলেন না। কিংবা আবহাওয়ারও অনেক বদল ঘটেছে তাই আলাদা করে কিছু মনে হয় না। আশ্বিন কাটলেই বাড়ির বড়রা সর্বক্ষণ গায়ে জামা দেওয়ার কথা বলতেন। আর কালীপুজোর ঠিক দু’দিন আগে থেকে বলতেন শ্মশানের ধারকাছ দিয়ে যাবি না, হাওয়া লাগবে। এই ‘হাওয়া’ ব্যাপারটা ঠিক কী সেটা বুঝে উঠতে পারিনি! একটু বয়স বাড়তে বুঝেছিলাম ‘হাওয়া’ বস্তুটি কি।
আসলে আমাদের বাড়ির কাছেই একটা শ্মশান আছে। শীতকালে দাপিয়ে মড়া পোড়ার গন্ধ আসত বাড়িতে। এখনও আসে। তবে অতটা নয়। এখন তো বিজলি চুল্লিতে দাহ করার নিয়ম। যাইহোক, সেই চামড়া পোড়ার গন্ধ ছিল বীভৎস। এই গন্ধটা নাকি ভূতেরা খুব ভালবাসে। তাই রাত্রিবেলা মড়া পোড়ার গন্ধ এলে ভাইবোন সবাই গুটিসুটি মেরে থাকতাম বিছানায়।
কালীপুজোর দু’দিন আগে থেকে ‘হাওয়া লাগা’ ব্যাপারটা হল এইসময় তেনারা নাকি নামতেন। কালীপুজোর আগের রাতটা হল ভূতচতুর্দশী। এইদিন তেনারা নামেন ধরায়। এই রাতটা কিন্তু বেশ গা-ছমছমে ছিল। শ্মশানও ছিল অন্ধকার। সামান্য আলো টিমটিম করে জ্বলত। শ্মশানকালী পুজো হলেও আলোর বাহুল্য ছিল না। ভূতচতুর্দশীর রাতে তেনাদের যাতায়াত বেশি হত বলে আলোর ব্যবস্থাও তেমন হত না। তাছাড়া শ্মশানকালীর প্রতিমা তৈরি থেকে পুজো, এমনকী বিসর্জন একদিনেই করতে হত।
সে ছিল বীভৎস রকম শিহরন জাগানো রাত। ওই পরিবেশ তৈরি হত সন্ধেবেলা থেকেই। যাঁরা পুজো করতেন তাঁরা সন্ধে থেকেই নেশা-ভাং করতেন। পুজো শুরু হত রাত গভীর হলে। যিনি পুজো করতেন তিনি লাল ধুতি আর উড়নি পরতেন। তাঁর ছিল জলদগম্ভীর কণ্ঠ। যখন মন্ত্রোচ্চারণ করতেন চারিদিক গমগম করত। ওই মন্ত্রোচ্চারণের মাঝেই হত দাহকার্য। সেই পুরোহিত ছিলেন এক তান্ত্রিক। মন্ত্রপাঠের মাঝেই হোমে ঘি ফেললেন বা ধুনো। শব্দ করে দপ করে হোমের লেলিহান শিখা আলোকিত করে তুলত! পাশাপাশি চিতার কাঠ ফটাস করে ফাটে। সবমিলিয়ে এক ভৌতিক পরিবেশ তৈরি করত শ্মশান জুড়ে। শুধু যে শ্মশানেই ভৌতিক কিংবা গা-ছমছমে শিহরন জাগানো পরিবেশ তৈরি হত এমন নয়, তার বাইরেও হত। তা দেখেছি একাধিকবার, একাধিক জায়গায়।
বহু বছর আগে আটের দশকের শেষের দিকে এক কালীপুজোর দিন আমরা কয়েক বন্ধু পৌঁছেছিলাম রাজারাপ্পা। সেখানে রয়েছে মা ছিন্নমস্তার থান। দিনের বেলা চমৎকার। অপূর্ব এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য! বিশেষ করে, দামোদর আর ভৈরবী নদী পরস্পর যেখানে মিলছে। দামোদর হল পুরুষ, ভৈরবী নারী। তাই ভৈরবীর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে দামোদর। সূর্য পাটে যাওয়ার পর থেকেই রং বদলাতে থাকে, পরিবেশ পাল্টাতে থাকে। মনে হয়, জঙ্গলের ভিতর থেকে এই বুঝি কেউ এসে জাপটে ধরবে। তেনাদের কেউ হয়তো এসে বলবে ‘আঁমাদের জাঁয়গায় তোঁরা ভাগঁ বঁসাতে এঁসেছিস কেঁন?’ না, তেমন কেউ নাকি সুরে কথা বলে দেখা করতে আসেনি।
এখন জানি না কেমন হয়েছে রাজারাপ্পা। সেইসময় কিন্তু বেশ ভয়ংকর নিরিবিলি ছিল রাজারাপ্পা!রাতের খাওয়া সেরে মন্দির চত্বরে এলাম। তখনও শুরু হয়নি পুজোপাঠ।রাত বারোটা নাগাদ রাজপুরুষ চেহারার পূজারি ঢুকলেন। তাঁর পরনে লাল ধুতি, লাল চাদর। হাতে পেল্লাই এক খাঁড়া। দেখলেই ভিরমি খেতে হয়! সেটি ছিল বলির খাঁড়া। প্রথমে তিনি পুজো শুরু করলেন। ওইরকম ভারী কণ্ঠস্বর তার আগে শুনিনি। এখনও যে শুনেছি, তেমন নয়। তাঁর মন্ত্রোচ্চারণ পাহাড়, জঙ্গল বিদীর্ণ করে ছড়িয়ে পড়ছে ছিন্নমস্তা মায়ের থান ছাড়িয়ে দূর, বহুদূরে। ওই মন্ত্র নাকি যতদূর শোনা যাবে ততদূর নাকি তেনাদের দেখা মিলবে না। কিংবা অশুভ আত্মা উপস্থিতও হবে না। ওইরাতে উপস্থিত এক ভক্ত বলেছিলেন এসব কথা। সাহস পেয়েছিলাম তাঁর কথায়। কেননা রাত যত বাড়ে, ভয় তত বাড়ে। অমন ভয়োৎপাদক রাত্রি খুব কম পেয়েছিলাম রাজারাপ্পার আগে। পুজোর পর শুরু হল বলি। পর পর এক এক করে বলি দিচ্ছিলেন তিনি। স্থানীয়দের কাছে শুনেছিলাম, আগে নাকি জঙ্গল থেকে বাঘ বেরিয়ে মা ছিন্নমস্তার থানে আসত বলির রক্ত খেতে। তাঁদের বিশ্বাস ছিল, মা ছিন্নমস্তা আসতেন বাঘিনী রূপে।
এর আগে দেখা কালীপুজোর এক ভয়ংকর রাত দেখেছিলাম উত্তরবঙ্গের কোনও এক স্থানে। সে ছিল শ্মশানকালী পুজোর রাত। জায়গাটির নাম এবং কীভাবে পৌঁছেছিলাম সেসব আর স্মরণে নেই। ঘটনাটি পঞ্চাশ বছর আগের। বালুরঘাটে গেছিলাম এক বন্ধুর বাড়ি। তার বাড়িতে ছিলামও কিছুদিন। দুর্গাপুজো কাটিয়ে। ঠিক কালীপুজোর কয়েকদিন আগে। কালীপুজোর দিন সকালে আমার বন্ধুটি নিয়ে গেছিল এক রাতের জন্য এক শ্মশান কালী পুজোয়।
বালুরঘাট থেকে অনেকটাই দূরে সেই পুজোর স্থান। গেছিলাম দু’চাকার গাড়িতে। জায়গাটি ছিল কোনও এক নদীর ধারে। নদীটি ছিল সম্ভবত আত্রেয়ী। তার চরে গ্রামের লোকেরা সেখানে দাহকর্ম সারত। মোদ্দা কথা সেটি ছিল শ্মশান। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অপূর্ব! অপার শান্তি বিরাজমান। বেশি নিরিবিলি, শান্ত জায়গা আবার কোনও কোনও সময় ভয়ংকর লাগে! তাই লেগেছিল। মাইলখানেকের ভিতর কোনও গ্রাম ছিল না। কিন্তু সেই শ্মশানে হত কালীপুজো। সেখানে বাস ছিল এক তান্ত্রিকের। তিনি তন্ত্র সাধনা করতেন। তিনিই পুজো করতেন। দূর গ্রামের লোকেরা যাঁরা শ্মশানটি ব্যবহার তাঁরাই পুজোর জোগাড়যন্তর করতেন। কালীপুজোর দিন কিছু লোকজনের মুখ দেখা যেত।
দিনের বেলাতেও ছিল আলোছায়ার রহস্যমাখা, বেশ ছমছমে জায়গা। ছিল ছোট্ট এক শ্মশানকালী মায়ের অস্থায়ী মন্দির। কেননা, বর্ষার সময় সব ভাসিয়ে দিত নদী। শিবের বুকে দাঁড়িয়ে আছেন মা। ভয়ংকর রূপ মায়ের। লাল টকটকে জিভ। আলুলায়িত কেশরাজি। মা শ্মশানকালী। শুনেছিলাম মা খুব জাগ্রতা। ভক্তের মনোবাঞ্ছা পূরণ করেন। তবুও ভক্তেরা মনোবাঞ্ছা পূরণের জন্য খুববেশি আনাগোনা করেছিলেন, তা কিন্তু নয়। অনেকেই বলেছেন, রাত্রিবেলা মন্দির থেকে নূপুরের ছমছম আওয়াজ আসে। চিতায় জ্বলন্ত শবদেহের চামড়া পোড়ার গন্ধ আর ধূপধুনোর গন্ধ মিশে গেছিল ওই কালীপুজোর রাতে। সঙ্গে তান্ত্রিকের পুজোর মন্ত্র মিশে গেছিল শ্মশানে রাত্রিবেলা! কাছেপিঠে প্রহরে প্রহরে শিয়ালের ডাক গা-শিউরে দিয়ে ভেসে এসেছিল।
সবচেয়ে ভীতিকর ছিল শকুনের ডাক। কেউ বলে শকুনের কান্না। ছিল এক ভয়াবহ রাত। আরও ভয়ংকর হয়ে ওঠে পুজোর সময়। বাতাসে ছিল হিম স্পর্শ। মন্দিরের ভিতরে ছিল বেশ আরামদায়ক হলেও ভিতরে দু’একজন ছাড়া দাঁড়াবারও জায়গা ছিল না। হঠাৎ পরিবেশ হয়ে ওঠে গুমোট এবং অস্বস্তিকর! প্রদীপ গেল নিভে! অথচ হাওয়া ছিল না। ভিতরে কারওর কারওর উপস্থিতি যেন টের পাওয়া গেল! পূজারি হঠাৎ মন্ত্রপাঠ থামিয়ে বললেন, “আপনারা কেউ এখন নড়াচড়া করবেন না। ভয় পেয়ে মন্দির-চৌহদ্দির বাইরে যাবেন না। বিপদ হতে পারে।” তারপর কাউকে বা কাদের উদ্দেশে বললেন, “যা, এখান থেকে বেরো। এর চৌহদ্দির মধ্যে থাকবি না,” বলে নিচু হয়ে ডান হাতের তর্জনী দিয়ে লাইন কেটে দিলেন।
আমরা দু’জনই ছিলাম বহিরাগত। বাকি জনা চার-পাঁচেক স্থানীয়। মনে হল, তাঁরা এসব ব্যাপার জানেন। বাকি যাঁরা এসেছিলেন তাঁরা বাড়ির দিকে রওনা দিয়েছিলেন সন্ধে নামার আগেই। যাইহোক, মন্দিরের ভিতরের পরিবেশ আবার স্বাভাবিক। সেই গুমোটভাবও আর ছিল না আশপাশে! প্রদীপও আর নেভেনি! মন্দিরের পাশেই থাকতেন সেই তান্ত্রিক পূজারি। কোনওরকমে রাত কাটিয়ে সেখান থেকে পালিয়ে এসেছিলাম সকাল হতেই।
পুরনো কালে এমনসব জায়গায় হত নরবলির খবর পাওয়া যেত! ডাকাতে কালী সেইসময় বাংলার জেলায় জেলায় ছড়িয়ে ছিল। বাংলার ডাকাতেরা ডাকাতি করতে যাওয়ার আগে নরবলি দিত। কালীপুজোর নিশুতিরাতে তারা বেরোতো ডাকাতি করতে। তার আগে মায়ের পুজো করে দিত নরবলি।
নরবলি হত খোদ কলকাতার বুকেও। তখন কলকাতা ছিল জলা-জঙ্গলে ভরা। বাঘ বেরোতো গিরিশ পার্ক, শোভাবাজার অঞ্চলে। ধর্মতলাতেও বাঘ ঘুরে বেড়াত। সে কথা ভিন্ন। চিৎপুরে ছিল চিতে ডাকাতের বাস। ডাকাতি করতে বেরোবার আগে কালীপুজো করে, নরবলি দিত। দিনের বেলাতেও ডাকাতি, রাহাজানি হত চিৎপুর রোডে। এই রাস্তাটাই ছিল কালীঘাট যাওয়ার একমাত্র পথ। তাই দলবেঁধে দর্শনার্থীরা যেতেন কালীঘাট। চিতু ডাকাতের দল তাঁদের পিছন থেকে পাবড়া ছুড়ে লুটপাট করত। রাতে ডাকাতিতে বেরোতো। তার আগে নিয়মমতো কালীপুজো করত। নরবলি দিত। চিতু ডাকাত যখন ‘হা রে রে রে, হা রে রে’ গগন ফাটানো চিৎকারে দিতে দিতে বেরোতো তখন এলাকার বাসিন্দাদের হাড় হিম হয়ে যেত। উত্তর কলকাতায় শুধু চিতু ডাকাত নয়, বহু ডাকাতই থাকত। তাদের বাস ছিল গঙ্গার ধারে হোগলার কিংবা গভীর জঙ্গলে।
নরবলি হত দক্ষিণ কলকাতার অভিজাত এলাকা গড়িয়াহাটের কাছে পূর্ণদাস রোডে। দেড়শো-দু’শো বছর আগে এই এলাকা জুড়ে ছিল জঙ্গল। সেই জঙ্গলে থাকত মনোহর বাগদি নামে এক ভয়ংকর ডাকাত। সে কালীপুজো করে ডাকাতিতে বেরোতো। কাজে সফল হলে নরবলি দিত মায়ের সামনে। তবে সে সাধারণ মানুষের সুবিধার্থে পুকুরও কাটে এলাকায়। শোনা যায়, মনোহর পুকুর রোড রাস্তার নামকরণ হয় তারই নামে। ডাকাত মনোহর বাগদির পূজিত কালী আজও বর্তমান। ছোট্ট একটি মূর্তি। তাই অনেকেই বলেন– ছানা কালী।
তিনশো বছর আগে খিদিরপুরের সার্কুলার গার্ডেনরিচ রোড এলাকা ছিল জলা-জঙ্গলে ভরা। ছিল শ্মশানভূমি। সেই শ্মশানভূমিতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলেন সোনাই কালী। প্রতিষ্ঠিতা রঘু ডাকাতের দাদা গোলকনাথ চক্রবর্তী।মা সোনাই কালী প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলেন এক কার্তিক অমাবস্যায় কালীপুজোর দিন। শোনা যায়, ডাকাতি করতে যাওয়ার আগে রঘু ডাকাত মায়ের পুজো করত। নরবলি দিত।
অমাবস্যার রাত মানেই ভীতিকর। প্রতি অমাবস্যায় মা কালীর থানে বিশেষ পুজো হয়ে থাকে। কার্তিক অমাবস্যায় কালীপুজোর রাতে সর্বত্রই বিশেষ পুজোর ব্যবস্থা থাকে। পুজো হয় গভীর রাতে। ডাকাতে কালী এবং শ্মশান কালীর পুজো ছিল ভয়ংকর। সাধারণ মানুষের ছিল সেসব স্থানে প্রবেশ নিষেধ।
একটা সময় ছিল সাধারণ মানুষ তারাপীঠ মহাশ্মশানে ঢুকতে ভয় পেতেন। গভীর অরণ্যে ঢুকতে গা ছমছম করত। শোনা যায়, বহু মানুষ দাহ করতে এসে শবদেহ ফেলে রেখে পালাতেন। শবসাধনা করতেন তান্ত্রিকেরা। হোমযজ্ঞ হত শ্মশানে। এখনও তারাপীঠ মহাশ্মশানে কালীপুজোর রাতে হোমযজ্ঞ হয়। মহাশ্মশানের নিশছিদ্র অন্ধকারে যখন যজ্ঞের লাল লেলিহান শিখা মিলিয়ে যায় তখন মায়াবী পরিবেশ তৈরি হয়। শিহরন জাগে। না, অলৌকিক কিছু চোখে পড়েনি। তবে অন্ধকার থেকে যখন তান্ত্রিকদের কণ্ঠস্বর ভেসে তখন চমকে যেতে হয় আপন-খেয়ালেই। এমনই এক ঘটনার সম্মুখীন হতে হয়েছিল একবার। কার্তিক অমাবস্যার রাত। শুরু হয়েছে পুজোর তোড়জোড়। মহাশ্মশানে ঘুরে বেড়াচ্ছি বন্ধুরা। হঠাৎই অন্ধকার কুটির থেকে কেউ যেন ডেকে উঠল, “বাবা কমল এদিকে আয়, শুনে যা।” দেখলাম কালো পোশাক পরিহিত এক তান্ত্রিক। আমাকে ডাকছেন। তাঁর তো আমার নাম জানার কথা নয়! বিস্মিত হলাম! হওয়ারই কথা।
তা গেলাম। আমার বন্ধুরা এগিয়ে গেছে। একেবারেই যে বুক ঢিপঢিপ করছিল না, তা নয়। কিছুটা বুক দুরুদুরু অবস্থায় তাঁর কুটিরে প্রবেশ করলাম। আমার নাম কি করে জেনেছিলেন সেই রহস্য ফাঁস করলেন তিনি। তবে অনেক কথা বলেছিলেন সেগুলো মিলেছিল। অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যতের কথা। না, তিনি কোনও অর্থ দাবি করেননি। সেইসময় ধূমপানের অভ্যাস ছিল, তাঁকে গোটাকয়েক সিগারেট দিতেই ভীষণ খুশি। কিছুক্ষণ তাঁর কুটিরে কাটিয়ে বেরিয়ে আসি। পরে সেই তান্ত্রিকের খোঁজ করি কিন্তু পাইনি। এমনকী তাঁর কুটিরটিও! কালীপুজোর রাতে তারাপীঠ মহাশ্মশানের ঘটনা আজও মনে পড়লে বিস্মিত হই! এছাড়া আর কোনও অলৌকিক ঘটনার সম্মুখীন হইনি। তবে অমাবস্যার রাতে বড়ই মোহময়, শিহরিত করে তারাপীঠের মহাশ্মশান।
তারাপীঠ থেকে কিছুটা দূরে মলুটি। সেখানে রয়েছেন বামাখ্যাপার ছোট মা মৌলিক্ষা দেবী। মলুটি হল টেরাকোটার গ্রাম। বহু টেরাকোটা মন্দির আছে এখানে। এখানকার কালীপুজো বিখ্যাত। শোনা যায়, এখানে দিনের দিনে প্রতিমা বানিয়ে পুজো করা হয়। মলুটির কালীপুজোর রাতটিও বেশ শিহরিত করেছিল। দীপান্বিতা অমাবস্যার রাতের অন্ধকার যেমন ভয়ংকর লাগে তেমনই সম্ভ্রম জাগায়। মলুটির কালীপুজোর রাতে তেমনই অনুভব করেছিলাম। এই গ্রামের কালীপুজো দেখার মতো। সারারাত ধরে কালীপুজো হয় মলুটিতে। পুজোর আগে মা মৌলিক্ষা দেবীর কাছে অনুমতি নিতে হয়। এই গ্রামের প্রধান উৎসব কালীপুজো। প্রবাসীরা সবাই ফেরেন গ্রামে। এখানকার কালীপুজোকে বলা হয় গ্রামের মানুষের মিলনোৎসব। মলুটির পুরনো দিনের কথা পাওয়া যায় কালকূট-এর ‘কোথায় পাব তারে’ বইয়ে। সেসব পাঠ করলে গায় কাঁটা দেয়! মলুটি গ্রামের কালীপুজোর রাতে উপস্থিত থাকা সারা জীবনের এক অভিজ্ঞতা!
শেয়ার করুন :