হিন্দু পুরাণমতে নরকাসুর রাক্ষসবধের পর শ্রীকৃষ্ণ বোন সুভদ্রার কাছে গেলে সুভদ্রা তাঁকে মিষ্টি,ফুল দিয়ে উষ্ণ অভ্যর্থনার পর কপালে টিকা পরিয়ে দেন যা থেকে ভাইফোঁটার শুরু।
পূরাণে আরও আছে সূর্যদেবের দুই পুত্র মনু আর যম।কন্যা যমুনা।বিয়ের আগে ভাইদের কপালে ফোঁটা দিয়ে তাদের মঙ্গলকামনা করেছিল যমুনা।সেই থেকে ভাইফোঁটার প্রচলন।
যমের হাত থেকে ভাইদের মঙ্গলকামনায় ফোঁটা দেয় বোনেরা।
‘ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা, যম দুয়ারে পড়ল কাঁটা।যমুনা দেয় যমকে ফোঁটা, আমি দিই আমার ভাইকে ফোঁটা’।
‘আরও একটি পৌরাণিক কাহিনী আছে ভাইফোঁটা নিয়ে। পাতালে বলিরাজার কাছে বন্দি হন স্বয়ং শ্রীবিষ্ণু।দেবতারা যখন কোনও উপায়ে তাঁকে বন্দিদশা থেকে মুক্ত করতে পারছেন না তখন নিরুপায় হয়ে তাঁরা মা লক্ষীর শরণাপন্ন হন।মা লক্ষী তখন বলিরাজাকে ভাই ডেকে ভাইফোঁটা দিয়ে উপহার হিসেবে শ্রীবিষ্ণুর মুক্তি চান।
আবার চতুর্দশ শতাব্দীতে দীপোৎসবকল্পের কথা পাওয়া যায়।সর্বানন্দসুরী নামে এক আচার্যের তালপাতার পুঁথি থেকে জানা যায় জৈন ধর্মের মহাপ্রচারক মহাবীরের প্রয়াণের পর তার সঙ্গী রাজা নন্দীবর্ধন দুঃখে ভেঙে পড়ে আহার নিদ্রা ত্যাগ করেন। কার্তিক মাসের শুক্ল পক্ষের দ্বিতীয়া তিথিতে তার বোন অনুসূয়া তাঁকে নিজের বাড়িতে এনে রাজতিলক পরিয়ে খাবার খাইয়ে দেন যা থেকে ভাইফোঁটা প্রথা শুরু হয়।
মা কালীর কাছে ভাইফোঁটা
কাটোয়া থানা বেড়া গ্রামে সাধক রামানন্দ প্রতিষ্ঠিত সিদ্ধেশ্বরী কালী ভাইফোঁটার দিন ফোঁটা দিয়ে নিরঞ্জিত হওয়ার প্রথা আছে।তেমনি মুর্শিদাবাদ জেলার সালার থানার ডাঙ্গা পাড়ার শ্মশান কালীর কাছে সেবাইতরা ফোঁটা নিয়ে তারপর বোনের কাছে ফোঁটা নেন।মায়ের বাঁ হাতের কড়ে আঙুলে চন্দন লাগিয়ে বয়ঃজ্যেষ্ঠ সেবাইত মায়ের আঙ্গুল কপালে তিনবার ছুঁয়ে নেন আর মায়ের ডান হাতে ধান দূর্বা দিয়ে মাথায় ফেলে নেন,তারপর মায়ের হাতে পৈতে,পান,সুপারি,মিষ্টি রেখে প্রসাদ হিসেবে নেওয়া হয়।
বাংলার বাইরেও সারা দেশ জুড়েই পালন করা হয় ভাইফোঁটা। নেপালে তার নাম ‘ভাইটিকা’, উত্তর ভারতে ‘ভাইদুজ’, মৈথেলি আর বিহারে ‘ভারদুতিয়া’ মারাথি,গুজরাটি,কোঙ্কণীতে ‘ভাই বিছিয়া’।
মহারাষ্ট্র, রাজস্থান, উত্তরাখণ্ড, ছত্তিশগড়, হিমাচল প্রদেশ, গুজরাত, মধ্যপ্রদেশ, গোয়ায় চালের গুঁড়ো দিয়ে আলপনা দেওয়া হয়, যাকে চৌকনা, চতুর্কোন, চোকনা বা চুকনা বলা হয়।
দু বছর করোনাকালে ভাইফোঁটা দেওয়া ও নেওয়ায় প্রচুর অসুবিধে ,অনেকে ভার্চুয়াল ফোঁটায় প্রথা সারার ,যাতায়াতেরও অসুবিধে পেরিয়ে এবারে সশরীরে ফোঁটা দেওয়া নেওয়া গিফ্ট দেওয়া নেওয়া আর মিষ্টিমুখ,খাওয়াদাওয়া চলবে যার মাধুর্য অমলিন ও চিরকালীন।
শেয়ার করুন :