‘…. এক হাজারো মে মেরি বহনা হ্যায় ‘।
ভাই বোনের অটুট সম্প্রীতি,ভালবাসার,স্নেহস্পর্শের রাখি।
ইতিহাসে রাখির প্রচলনের উল্লেখ ঐতিহাসিক জেমস টডের ১৮২৯ সালের রাজস্থান সম্পর্কে বইতে পাওয়া যায় I কিন্তু পুরাণে এর উল্লেখ বেশ প্রাচীন।
কৃষ্ণ -দ্রৌপদীর রাখি
পুরাণ আর প্রবাদ অনুযায়ী মকর সংক্রান্তি-তে কৃষ্ণ আখ ছাড়ানোর সময় তাঁর আঙুলটি কেটেছিল। তাঁর রানী, রুক্মিণী সঙ্গে সঙ্গে একটি আধিকারিককে ব্যান্ডেজ আনতে পাঠিয়েছিলেন। ইতিমধ্যে দ্রৌপদী, যিনি পুরো ঘটনাটি দেখছিলেন, তার শাড়ির কিছুটা অংশ কেটে ফেললেন এবং রক্তক্ষরণ বন্ধ করতে আঙ্গুলটি বেঁধে দিয়েছিলেন। বিনিময়ে, কৃষ্ণ প্রয়োজনে তাকে সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
রানী কর্ণাবতী ও হুমায়ূনের রাখি
স্বামী রানা সাঙ্গার মৃত্যুর পরে কর্ণবতী মেওয়ারের রানী হয়ে রাজ্যশাসন করেন। তিনি তার বড় ছেলে বিক্রমজিৎর নামে শাসন করেছিলেন। গুজরাটের বাহাদুর শাহ দ্বিতীয়বার মেওয়ার আক্রমণ করেছিলেন। এরই মধ্যে,কর্ণবতী হুমায়ূনকেও সাহায্যের জন্য লিখেছিলেন। তিনি তাকে রাখি পাঠিয়ে সুরক্ষা চেয়েছিলেন। হুমায়ূনের পিতা বাবর ১৫২৭ সালে তাঁর বিরুদ্ধে রাজপুত সেনাবাহিনীর একত্রিত হওয়ার সময় রানা সাঙ্গাকে পরাজিত করেছিলেন। সাহায্যের ডাক পেলেও তখন মুঘল সম্রাট আরেকটি সামরিক অভিযানের মাঝামাঝি ছিলেন। এটি ত্যাগ করে তিনি মেওয়ারের দিকে যাত্রা করলেন।
দুর্ভাগ্যক্রমে,তিনি সময়মত পৌঁছতে না পারায় চিতোরে রাজপুত সেনাবাহিনী পরাজিত হওয়ায় রানী কর্ণাবতী ইতিমধ্যে নিজে আগুনে ঝাঁপ দিয়ে জহরব্রত করেন। এরপরে হুমায়ুন কর্ণাবতীর পুত্র, বিক্রমজিৎকে রাজ্য পুনরুদ্ধার করে দিয়েছিলেন।
যম ও যমুনার রাখি
লোকগাথা অনুসারে, রক্ষা বন্ধনের আনুষ্ঠানিকতা নিয়ে যম, মৃত্যু দেবতা এবং তার বোন যমুনার গল্পতে যমুনা যখন যমকে রাখি বেঁধেছিল, মৃত্যুর কর্তা তাকে অমরত্ব দিয়েছিলেন। তাই তিনি বলেছিলেন যে যে কোনও ভাই যে রাখি বেঁধে এবং তার বোনকে রক্ষা করার প্রস্তাব দিয়েছে সেও অমর হয়ে যাবে।
পুরাণকথায় গনেশ ঠাকুর আর সন্তোষী মা, বলি রাজা ও মা লক্ষ্মী, গ্রীক সম্রাট আলেকজান্ডারের স্ত্রী রক্সানা আর পুরুর রাখীর গল্প ও কথিত আছে ।
প্রাচীন ভারতের প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী মেয়েদের বিয়ে হয়ে গেলে সচরাচর তার নিজের বাড়ি আসা হতো না।রাখির দিনে তারা নিজেরদের বাড়িতে ফিরত ও তাদের আনতে আর ফেরত যাবার সময় তাদের ভাইরা তাদের সঙ্গে যেত।
সাম্প্রদায়িক রক্তক্ষয়ী অশান্তি এড়াতে রবীন্দ্রনাথের দুই ধর্মের মধ্যে শান্তি, সৌহার্দ্য ও ভ্রাতৃত্বের জন্য রাখি উৎসবের সূচনা, সেই উপলক্ষে ‘বাংলার মাটি বাংলার জল’ গান গেয়ে মিছিল করে রাখি উৎসব পালনের কথা বাঙালির স্মৃতিতে চিরকাল অমলিন।
প্রাচীন থেকে বর্তমান ,সময়ের কালে কালে সব কিছুরই বদল হলেও রাখির মর্যাদা কমেনি। শহরে, গ্রামে, সকল শ্রেণীর মানুষ আজও এই উৎসব পালনে মেতে ওঠে।এই উপলক্ষে সারাবছর যত ঝগড়া ঝাঁটি হোক না কেন বোনেদের ভাইদের রাখি পরানো, গিফট নিয়ে খুনসুটির মাধুর্য চিরকালীন।
করোনা ক্রান্তিকালে সেই চিরকালীন উৎসবের মধ্যেও এবার আশংকা আর আতঙ্ক। যাতায়াতের অসুবিধেতে সংক্রমণের ভয়, একটু দূরে বাড়ি হলেও সেখানে যাতায়াতের চিন্তা,গিফট কেনা,দেওয়া নেওয়া সবই এই করোনাসুরের জন্য এবার থমকে আছে। অনেকে অনলাইনে গিফট,হোয়াটস্যাপ ভিডিওতে ভার্চুয়াল রাখি উৎসব পালন করবে।ভাই বোনের সুরক্ষার জন্য হয়ত এবছর এমন ভাবেই রাখি হবে I
করোনা মুক্ত হয়ে একদিন নিশ্চয়ই নিউ নর্মাল হবে।আর তারপরে…
‘সারি উমর হমে সঙ্গ রহনা হ্যায়’ I
তথ্য সুত্র –
‘ফেস্টিভ্যালস অফ ইন্ডিয়া’,
‘পপুলার কালচার ইন গ্লোবালাইজড ইন্ডিয়া’- কে,মোতি গোপালসিং
‘হিস্ট্রি অফ রাখি ’ ই টাইমস
শেয়ার করুন :