সাইয়ারা ঝড় -

সাইয়ারা ঝড়

শুধুই কাঁচা আবেগ,দুর্দান্ত সংগীত,দারুণ নতুন জুটি না আরও কিছু?

এখন সাইয়ারা ঝড়ে সমগ্র ভারত কম্পমান।মোহিত সুরির নতুন জুটি অহন পান্ডে আর আনিত পড্ডার জাঁকালো আবেগের প্রেমকাহিনিতে প্রেক্ষাগৃহে নতুন হিস্টিরিয়ার ইন্সটা আর সোশ্যাল নেটওয়ার্কে রিলস যেখানে দেখা যাচ্ছে  ইয়াং জেন  হলে পাগলপ্রায় হয়ে আকুল  কাঁদছে ,খালি গায়ে গড়াগড়ি করছে এমন উন্মাদনা।৩৭ কোটি টাকার বাজেটের সাইয়ারা এখন অবধি ৪৮৫ কোটি (গ্রস) টাকার ব্যবসা করে ফেলেছে।

এখনকার পিতৃতান্ত্রিক সমাজে প্রবল পৌরুষ,ভয়ঙ্কর উদ্ধত,রাগি,ক্যাসানোভা, নায়ক  চরিত্র অ্যানিমাল ছবির পর থেকে আজকের জেন এক্সের কাছে কেন এতো সাংঘাতিক জনপ্রিয় এবং এই প্রবণতার পারিবারিক সমাজজীবনে কী প্রভাব এবং সেটা কতটা ভালো এই বিষয় সমাজ বিজ্ঞানী,মনোবিদদের আগ্রহ ও চর্চার কারণ হতে পারে এবং হচ্ছেও।

আমরা গল্পে দেখি রাগী, অন্তর্মুখী কিন্তু প্রতিভাবান উঠতি সঙ্গীতশিল্পী,মারকুটে ,গ্যাং লিডার  ঋষ কাপুর (আহান পান্ডে) তার জীবনে আশ্রয় খুঁজে পায় এক সহজ-সরল, স্থির প্রকৃতির গীতিকার বাণী বাত্রার (অনীৎ পড্ডা ) মধ্যে। হৃদয়ভঙ্গের পরে বাণী আবারও নিজের কথার জাদু খুঁজে পায় ঋষের ভালোবাসায়। দুজনের মধ্যে গড়ে ওঠে এক উষ্ণ, আবেগঘন সম্পর্ক, আর ঋষের তারকা হয়ে ওঠার উত্থানও যেন এক স্বপ্নের মতো। কিন্তু সেই স্বপ্নপথে আসে এক মর্মান্তিক বাঁক, যা তাদের প্রেম এবং মানসিক দৃঢ়তাকে কড়া পরীক্ষা দেয়। এই চলচ্চিত্র দেখায় কীভাবে তাঁরা সেই কঠিন অধ্যায়কে মোকাবিলা করে।রোমান্স, কাঁচা আবেগ, মনোমুগ্ধকর দৃশ্য আর হৃদয়স্পর্শী সুর এই সবকিছুই যেন মোহিত  সুরির (Mohit Suri) ছবির স্বাক্ষর, এবং সাইয়ারা তাতে পুরোপুরি খাঁটি। চিত্রনাট্যকার সংকল্প সদানাহ ছবির শুরুতেই আবেগের সুর বেঁধে দেন বিয়ের দিনে ছেড়ে যায় বাণীকে তার হবু বর। ছয় মাস পর, ভাঙা মন নিয়েই সে কাজ শুরু করে সাংবাদিকতা ইন্টার্নশিপে। সেই সময়েই প্রবেশ ঘটে ঋষ কাপুরের,একটি  রগচটা ,উগ্রস্বভাব, তীব্র আবেগপ্রবণ তরুণ সঙ্গীতশিল্পী, যার একটাই স্বপ্ন,বিশ্বজয়।

বাণী ও ঋষ,দুজনেই নিজেদের ব্যক্তিগত যন্ত্রণায় জর্জরিত, কিন্তু একে অপরের মধ্যে খুঁজে পায় নিরাময়। ছবির প্রথমার্ধে যে রোমান্স ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে, সেটাই পরবর্তীতে গভীর প্রেমের দিকে নিয়ে যায়। তবে, ছবির মূল ট্র্যাজেডি অংশটি ,অ্যালজাইমার রোগ,তাড়াহুড়ো করে দেখানো হয়েছে, যার ফলে কাহিনি কিছুটা দুর্বল লাগে।এই রকম রোমান্টিক-সঙ্গীতধর্মী কাহিনি অতীতে দেখা গেছে ঠিকই, কিন্তু সাইয়ারার বিশেষত্ব হল এটি বর্তমান সোশ্যাল মিডিয়া, রিলস আর মিউজিক কোলাবের যুগে নতুন প্রাসঙ্গিকতা তৈরি করে।মোহিত সুরি আবেগের মূল কেন্দ্রে ঠিক হাত রেখেছেন। কিন্তু সম্পূর্ণ চিত্রনাট্যের গতি কখনও ধীর, কখনও তাড়াহুড়ো,যার ফলে কিছু গুরুত্বপূর্ণ দৃশ্য খুব তাড়াতাড়ি পেরিয়ে যায়। তবু কিছু মুহূর্তে কাঁচা, বাস্তব আবেগ ঠিকমতো পৌঁছে যায় দর্শকের মনে।

চলচ্চিত্রটির আবেগপ্রবণ কোরকে পরিপূর্ণতা দেয় এর সঙ্গীত,ফাহিম আবদুল্লাহ, তনিশ্ক বাগচী, ঋষভ কান্ত, বিষাল মিশ্র, আরসালান নিজামী, মিথুন ও সচেত-পরম্পরা—এদের সুরে তৈরি গানগুলো একের পর এক শ্রুতিমধুর ও হৃদয়গ্রাহী। জন স্টুয়ার্ট এডুরির আবহসঙ্গীত পুরো অভিজ্ঞতাকে আরও সমৃদ্ধ করে তোলে। বিকাশ শিবরামনের সিনেমাটোগ্রাফি রঙিন, প্রাণবন্ত, এবং মঞ্চ পারফর্মেন্স বা আবেগঘন দৃশ্যগুলো অসাধারণভাবে ক্যামেরাবন্দি করেছে।অভিনয়ে আহান পান্ডের আত্মপ্রকাশ চমকপ্রদ। একদিকে তারকার মতো আত্মবিশ্বাস, অন্যদিকে সম্পর্কের যন্ত্রণায় বিধ্বস্ত এক তরুণ,দুটো দিকই দারুণভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। ফিনালে দৃশ্যে এক পুরোনো মুহূর্তে ফিরে গিয়ে তার ‘র অস্বস্তিকর আত্মবিশ্বাসকে রূপান্তর করেন নিখাদ আবেগে,কিছুটা  বিরাটকোহলির ‘কিং’ মোডে। অনীত পড্ডাও  প্রেম ও আবেগের দৃশ্যে দারুণ। তাঁর উপস্থিতি কোমল, কিন্তু দৃঢ়। বিশেষ করে একটি রেকর্ডিং স্টুডিওর দৃশ্যে, যেখানে তিনি আবেগের স্থায়ীত্ব বনাম ট্রেন্ডের ক্ষণস্থায়ীতা নিয়ে কথা বলেন, সেখানে তাঁর সংলাপ ও অভিব্যক্তি দর্শককে ছুঁয়ে যায়।

সাইয়ারা একটি ভিজ্যুয়ালি আকর্ষণীয়, আবেগঘন, ও সুরভরা রোমান্টিক মিউজিক্যাল যা নতুন কিছু না হলেও, আবেগ ও সঙ্গীতপ্রেমীদের জন্য একটি একবার দেখার মতো অভিজ্ঞতা। আহান-অনীতের অনবদ্য অভিনয়, প্রাণবন্ত সংগীত, এবং মোহিত সুরির আবেগ-নির্ভর দৃষ্টিভঙ্গি এই চলচ্চিত্রকে মনে রাখার মতো করে তোলে।

এই ছবির মার্কেটিং নিয়ে কিছু কথা।যশ রাজ্ ফিল্মস অত্যন্ত সুনিপুণ ভাবে প্রথাগত প্রচার কৌশল এড়িয়ে ,হলে ইয়াং জেনের বাঁধভাঙা চরম আবেগের রিলস সমাজমাধ্যমে মার্কেটিং আরও অন্যান্য নানাভাবে যেমন গান ভাইরাল হওয়া এই সব মার্কেটিং প্রমোশনাল  স্ট্র্যাটেজি দুর্দান্ত ফলপ্রসূ হয়েছে যা ছবির  মেগাহিট হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ।

শেয়ার করুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *